প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও পরিবারের উন্নয়ন ও পুনর্বাসন কর্মসূচি

ভূমিকা ও যৌক্তিকতা:

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ। জাতীয় প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা অনুযায়ী প্রায় ২৫ ভাগ লোক প্রতিবন্ধীত্বের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মোট প্রতিবর্ন্ধীর অধিকাংশের বসবাস গ্রামাঞ্চলে যারা রাষ্ট্রর বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পরিবারে সারাজীবনের জন্য পরনির্ভশলীল হয়ে পড়ে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিবারের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক এবং শারীরিক বোঝা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। গরীব পরিবারে এ বোঝা চরমে হতে পারে। আর যদি পরিবারের প্রধান ব্যক্তি যার আয়ের ওপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল, সে কোন কারণে প্রতিবন্ধিত্ব হলে সেই পরিবারের ওপর চরম দুর্দশা ও দারিদ্র্যতা নেমে আসে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিবারে এবং সমাজে অবহেলার শিকার হয়। অবহেলা কিংবা অবমূল্যায়ন সবসময় হতাশা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা তৈরি করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসন ইত্যাদির মতো মৌলিক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। রাষ্ট্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন ও পুনর্বাসনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণে গ্রাম বা তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবর্ন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষে তা গ্রহণ করা অসম্ভব। স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসন ইত্যাদির মতো মৌলিক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে প্রতিবন্ধীরা চরম দুর্দশা ও দারিদ্র্যতার অভিশাপ নিয়ে অতি কষ্টে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হয়। কষ্টের এমন চরম পর্যায় পৌছে তা দেখে প্রতিবন্ধী সন্তানদের মৃত্যু কামনার মত মানসিকতা দেখা যায় পিতা-মাতার মধ্যে।

ফেয়ার মনে করে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিবার বা সমাজের কোন বোঝা নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সম্ভাবনাগুলো বিকশিত করার মাধ্যমে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে পুনর্বাসন করা সম্ভব। আর এ জন্য দরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন ও পুনর্বাসনে সামাজিক গণসচেতনতা, সঠিক পরিচর্চা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিশ্চিত করা।

প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য:

প্রদিবন্ধী ব্যক্তি ও পরিবারের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নয়নের মুলস্রোতধারায় আনা।

 প্রকল্পের উদ্দেশ্যসমূহ:

১) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য চাহিদাভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা; ২) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা; ৩) প্রবিতন্ধী ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের আয়মূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা; এবং ৪) পরিবার ও সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে ইতিবাচক ধরাণা তৈরিতে গণসচেতনতা সৃষ্টি।

 প্রধান প্রধান কার্যক্রম:

  • প্রতিবর্ন্ধী ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ ও ডাটা বেইজ তৈরি।
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিয়মিত থ্রেরাপি নিশ্চিত করার লক্ষে প্রতিবন্ধী পরিবারের ২ জন সদস্যকে থ্রেরাপিস্ট এর ওপর ৩ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান।
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রফেশনাল কমিউনিটি থ্রেরাপিস্ট হিসেবে তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান।
  • স্কুলে ভর্তিযোগ্য প্রতিবন্ধী শিশুকে স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করা।
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যকে উপযোগী এবং বাজারের চাহিদা ভিত্তিক ট্রেড এর ওপর দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান।
  • প্রতিবন্ধী পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে মেনটরিং সেশন এর আয়োজন করা।
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা সৃষ্টিতে নানা প্রকার সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহ

দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল:

  • প্রতি প্রতিবন্ধী পরিবারের ২ জন সদস্যকে থ্রেরাপিষ্ট এর ওপর ৩ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করায় পরিবারের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নিয়মিত থ্রেরাপি এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত হওয়ায় ১০০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসা নিশ্চিত হবে।
  • ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থ্রেরাপিস্ট এর ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করায় প্রত্যেকেরই কমিউনিটি ভিত্তিক থ্রেরাপিস্ট হিসিবে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে।
  • ৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে এবং ১০০ জন পরিবারের সদস্যকে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করায় তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুয়োগ সৃষ্টি হওয়ায় দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষা, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত হয়েছে।
  • প্রতিবন্ধীর জন্মগত ও মানবসৃষ্ট কারণসহ মর্যাদা ও অধিকার বিষয়ক গণসচেতনতা সৃষ্টির ফলে এলাকায় প্রতিবন্ধীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মর্যাদা ও অধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে।

কর্মএলাকা: কুষ্টিয়া সদর উপজেলা

মেয়াদকাল: ৩ বছর ( জানুয়ারি ২০১৯- ডিসেম্বর ২০২১ সাল)

তহবিল এর উৎসহ: ক্রাউড ফান্ডিং (লক্ষ ১৫ লাখ টাকা)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *