মানবতার জন্য প্রচারাভিযান

প্রকল্পের নাম : মানবতার জন্য  প্রচারাভিযান

লক্ষ্য : মানবিক মূল্যবোধ জোরদারকরণের মাধ্যমে সম্প্রীতি ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

ভূমিকা:

অন্যের বিপদ-আপদে ছুটে যাওয়া, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সমাজ উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করা, সর্বোপরি একে অপরের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করা বাঙালি সংস্কৃতিতে সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ। একের প্রয়োজনে অন্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র কিংবা লিঙ্গ বিভাজন উদারপন্থী পরমতসহিষ্ণু বাঙালি সংস্কৃতির বিপরীতধারা হিসাবেই বিবেচিত। সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যের কারণেই ধর্ম নিয়ে কলহ, উন্মত্ততা কিংবা রক্তপাত বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসাবে চিহ্নিত হয়না। উদারতার ঐতিহ্যের কারণে দেশের ভেতরে-বাইরে অন্য জাতির বিরুদ্ধে অবমাননা কিংবা ঘৃনা সঞ্চার বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়না। ফেয়ার দীর্ঘদিন থেকেই সীমিত সামর্থের মধ্যেই বাঙালি সংস্কৃতির এই মূলধারাটিকে পুষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে। এই চেষ্টার অংশ হিসাবে ফেয়ার গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে “মানবতার জন্য প্রচারাভিযান” শীর্ষক একটি কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচির প্রধাণ উদ্দেশ্য দু’টিঃ

একঃ সম্প্রীতিভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।

দুইঃ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।

উদ্দেশ্য একঃ সম্প্রীতিভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।

বিভেদ নয় সম্প্রীতিই হচ্ছে বাঙালির প্রধান পরিচয় চিহ্ন। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাঙালির এই সুপরিচয় চিহ্নটিকে ধবংস করে, বাঙালিকে বিশ্বের কাছে একটি ঘৃণবাদী-বিদ্বেষবাদী জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে দেয়ার একটি অপচেষ্টা চালু আছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। গভীর পরিতাপের বিষয় এই যে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর এই অপচেষ্টায় ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের জীবনের গভীর অবলম্বন ধর্মীয় বিশ্বাসকে। ধর্মের নাম করে বিদ্বেষ ছড়ানোর কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ ধর্মপ্রান মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে একে ধর্মের বিরুদ্ধে অন্য ধর্মকে ব্যবহার, এমনকি এক ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন মত ও পথকে কেন্দ্র করে পুঁতে দেয়া হচ্ছে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্বের বীজ। এসবে কার লাভ আর কার ক্ষতি? এতে করে ঘৃণাবাদী-বিদ্বেষবাদীরা তাদের স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে লাভবান হয়। অন্যদিকে, বিশ্বমঞ্চে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সম্প্রীতির অনন্য নজীর হিসেবে পরিচিত বাঙালি জাতি ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

ফেয়ার মনে করে, বাংলাদেশের মূল পরিচয় অর্থ্যাৎ সকলের সঙ্গে সম্প্রীতির ধারাটি সমুন্নত রাখায় অন্যতম ভুমিকা রাখতে পারে শিক্ষার্থী সমাজ। শিক্ষার্থীরাই তাদের সচেতন অবস্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্বেষ-বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করতে পারে। সমাজের অসচেতন মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ-বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিতেও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনেক। কারণ শিক্ষার্থীদের মানুষ বিশ্বাস করে, শিক্ষার্থীদের উপরে মানুষ আস্থা রাখে। সম্প্রীতিভিত্তিক সমাজ-জাতি-দেশ রক্ষায় ফেয়ার সীমিত সামর্থের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়।

উদ্দেশ্য এক সংক্রান্ত কার্যক্রমঃ

– শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্প্রীতি বিষয়ে নিয়মিত মতবিনিময় ।
– সম্প্রীতিভিত্তিক সমাজের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অবগতিমূলক সেশন পরিচালনা।
– সম্প্রীতি বিনষ্টকারী পক্ষগুলি সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে অবহিত হওয়া।
– প্রাথমিক পর্যায়ে ক্লাশ ক্যাপ্টেন ও পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতি বিষয়ক লিডারশীপ প্রশিক্ষণ।
– কুইজ, বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগিতার মত আয়োজনের মাধ্যমে সম্প্রীতিবিষয়ক জানাশোনা বৃদ্ধি।
– সম্প্রীতির গুরুত্ব বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবদের সাথে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভার আয়োজন।

উদ্দেশ্য দুইঃ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।

হরিজন, দলিত, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী, পথশিশুদের মত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা আমাদের সমাজে অবহেলিত ও নির্যাতিত। রাষ্ট্রে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাগুলো বাধাহীনভাবে ভোগ করার সুযোগ এরা পায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এর মতো মৌলিক বিষয়গুলো এখনও নিশ্চিত নয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। এর পরিনতিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

ফেয়ার মনে করে, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করার বাঙালির ঐতিহ্যপূণ সংস্কৃতি চর্চা বেগবান করার মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের শিক্ষার্থীসমাজ। তরুন শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস তৈরি করে দেয়ার সুফল হবে সুদূরপ্রসারী। একদিকে, ভবিষ্যতের নাগরিকেরা সমাজের লাঞ্চিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনের শিক্ষা অর্জন করবে। অন্যদিকে, মানবকল্যানে নিবেদিত থাকার সুবাদে এই শিক্ষার্থীরা ঘৃণা-বিদ্বেষবাদীদের শিকার পরিনত হবার ঝুঁকি থেকে মুক্ত্র থাকবে।
এসব বিবেচনা বোধ থেকে তরুন শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে সংযুক্ত করার কাজটি করতে চায় ফেয়ার।

উদ্দেশ্য দুই সংক্রান্ত কার্যক্রম:

– প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা অবহিতকরণের জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানামুখী সেশন।
– শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রান্তিক মানুষদের মতবিনিময়ের আয়োজন।
– সরাসরি অভিজ্ঞতালাভের লক্ষ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাসের স্থানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানামুখী কর্মকান্ডের আয়োজন।
– প্রান্তিক মানুষদের সহায়তা তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিশেষ করে খাতা-কলম সরবরাহ ।
– প্রান্তিক মানুষদের জন্য গৃহিত কর্মসূচিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

টার্গেট জনগোষ্ঠী : কুষ্টিয়া জেলার কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৪ টি এবং কুমারখালি উপজেলায় ৪ টি মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় ৮০০০ জন শিক্ষার্থী।

মেয়াদ : ০১ আগস্ট ২০১৭-আগস্ট ২০১৯

বাস্তবায়নে : ফেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *