হরিজন কন্যা সিমার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান
হরিজন কন্যা সিমার স্বপ্ন সে লেখাপড়া করে আইনজীবী হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করবে। সে জালিম কৃষ্ণ ও শান্তি রানীর কন্যা ছয় ভাইবোনের মধ্যে সিমা সকলের ছোট। একাদশ শ্রেণিতে পড়–য়া সিমারানীর ইচ্ছা সে বড় হয়ে একজন নামকরা আইনজীবী হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করবে। কিন্তু সিমার বাবা বাংলাদেশ রেলওয়ের স্বল্প আয়ের একজন আবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। তার সামান্য পেনশনে পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয় বহন করে সিমার স্বপ্ন পূরণ করা তার পক্ষে এক অসম্ভব কল্পনা ছিল। তাছাড়া হরিজন কন্যার কলেজে পড়া বা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা হরিজন সমাজের চোখে বেমানান। অর্থনৈতিক সমস্যা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সিমার পড়া লেখা যখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম ঠিক তখনই ঈশ্বরদী ফেয়ার এ্যাডভোকেসী গ্রæপের সদস্য, কলেজ শিক্ষক ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ঈশ্বরদী প্রতিনিধি স্বপন কুমার কুন্ডুর সাথে সিমার দেখা তার কলেজ ক্যাম্পসে। তারপর সিমার স্বপ্ন পূরণে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা আর রইল না। পূরণ হতে চলেছে তার স্বপ্ন।
ফেয়ার অ্যাডভোকেসি গ্রæপের সদস্য স্বপন কুমার কুন্ডুর সাথে সিমার পরিচয় কলোনিতে। ৩ বছর পূর্বে অ্যাডভোকেসি গ্রæপের সভায়। উল্লেখ্য যে, অ্যাডভোকেসি গ্রæপ হরিজন সম্প্রদয়ের জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করে। ফেয়ার ফেয়ার তখন সে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। তখন সে শোনে সিমার স্বপ্ন ও সমস্যার কথা। স্বপন কুমার কুন্ডুর কয়েকবার কলোনিতে গেলেও সিমার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্ত সিমাকে তার কলেজ প্রাঙ্গণে হঠাৎ দেখতে পেয়ে তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি ভাবতেই পারেননি হরিজন মেয়ে সিমা এখন কলেজে পড়ছে।
স্বপন কুমার সিমার সাথে কথা বলেন কলেজ প্রঙ্গণে । শোনেন তার স্বপ্ন ও সমস্যা। নেন পরিবারের অন্যান্য তথ্য। তার পর একটি প্রতিবেদন লেখেন প্রত্রিকায় প্রকাশের জন্য। যা গত ২১ ডিসেম্বর ২০১১ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শেষের পাতায় সিমার লেখাপড়ার সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদনমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। যা সিমার স্বপ্ন পূরণে মাইল ফলক।
প্রতিবেদনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ অনেকের দৃষ্টিগোচর হয় এবং রিপোর্টার স্বপন কুমার কুন্ডু এর কাছে ঘটনা জানতে চান। বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানতে তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেনকে (তৎকালীন) দায়িত্ব প্রদান করেন। নির্বাহী কর্মকর্তা সিমার পরিবার ও সিমার সাথে কথা বলে ২৬ শে ডিসেম্বর মাননীয় মন্ত্রীকে জানান বিষয়টি সত্য। পরে মন্ত্রী মহোদয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিমার যৌথ স্বাক্ষরে সোনালী ব্যাংক ঈশ্বরদী শাখায় (হিসাব নং ৩৪১২৮৩৮৩) প্রতিমাসে শিক্ষা খরচ বাবদ ৩,০০০ টাকা তুলতে পারবে শর্তে মন্ত্রীমহোদয় ১০০,০০০ টাকা প্রদান করেন এবং কলোনির পাশে রেলওয়ের ৩ কাঠা জমিতে প্রায় ৮,০০,০০০ (আট লক্ষ) টাকা ব্যায়ে সিমার জন্য অন্যান্য সুবিধাসহ তিনরুম বিশিষ্ট বাড়ি তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও মিউচুয়াল ব্যাংক প্রতিমাসে শিক্ষা খরচ হিসেবে ১,০০০ টাকা, পাবলিক লাইব্রেরী ঢাকার কর্মকর্তা মো: ফারুক হোসেন প্রতিমাসে শিক্ষা খরচ হিসেবে ১,০০০ টাকা, ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলাম নামে একজন প্রতিমাসে শিক্ষা খরচ হিসেবে ১,০০০ টাকা এবং ঈশ্বরদী মহিলা কলেজ সিমার সকল প্রকার বই খাতা ফ্রি প্রদান করবেন বলে অঙ্গীকার করেন। এখন কলোনিবাসি ও সিমার পরিবার স্বপ্ন দেখছে সুন্দর ভবিষ্যতের। সিমা তার স্বপ্নপূরণে সহায়তা করার জন্য প্রতিবেদকসহ সহায়তা প্রদান করতে আগ্রহী সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং দোয়া চেয়েছেন সে যেন বড় হয়ে বড় আইনজীবী হতে পারে এবং জাতির সেবা করতে পারে।